কুনিও হত্যা: এক আসামির খালাসের রায় স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ

সাত বছর আগে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইছাহাক আলীর খালাসের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

 

আজ (২২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দায়ের করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এস কে) মোরশেদ।

গতকাল বুধবার হাইকোর্ট এ মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অন্য আসামিকে খালাস দেন।

 

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

 

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস, এ মান্নান ও জাকির হোসেন মাসুদ। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন আহসান উল্লাহ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে ২১ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার দায়ে জেএমবির পাঁচ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে মৃত্যুদণ্ডের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদেনের জন্য নথি) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।

 

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেএমবির পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন, একই এলাকার ইছাহাক আলী, বগুড়ার গাবতলী এলাকার লিটন মিয়া ওরফে রফিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের রাজারহাটের মকর রাজমাল্লী এলাকার আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব এবং গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন। এরমধ্যে হাইকোর্টের রায়ের ইছাহাক আলী খালাস পান। বাকি চার আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরমধ্যে আসামি বিপ্লব পলাতক আছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে।

 

হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারিক আদালতে খালাস পেয়েছিলেন আরেক আসামি পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ (২৮)।

এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দুজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরী এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান (২৮) ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের আগে ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি (২১) অভিযোগ গঠনের পরে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

 

জেএমবির ওই আট জঙ্গির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী। পরে মামলাটি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে স্থানান্তরিত হলে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলায় বাদীপক্ষের ৫৫ সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করতেন। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর ওই কাচু আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার

» মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ভেতরের শকুন, বাইরেরগুলো ওত পেতে রয়েছে: মির্জা আব্বাস

» ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা-ভূমিধসে নিহত ২৭

» বর্তমান পরিস্থিতির সমাধানে সব দলের সঙ্গে বসবে সরকার : মাহফুজ আলম

» সবাইকে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে বিএনপি : তারেক রহমান

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলল জামায়াত

» প্রতিদিন নগদে যুক্ত হচ্ছেন ২০ হাজার গ্রাহক

» ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যানুয়াল রিস্ক কনফারেন্সে ঝুঁকি মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ

» গুজবে কান না দিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে, নওগাঁর ডিসি

» ইসকন নিষিদ্ধের দাবীতে ইসলামপুরে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কুনিও হত্যা: এক আসামির খালাসের রায় স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ

সাত বছর আগে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইছাহাক আলীর খালাসের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

 

আজ (২২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দায়ের করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এস কে) মোরশেদ।

গতকাল বুধবার হাইকোর্ট এ মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অন্য আসামিকে খালাস দেন।

 

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

 

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস, এ মান্নান ও জাকির হোসেন মাসুদ। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন আহসান উল্লাহ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে ২১ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার দায়ে জেএমবির পাঁচ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে মৃত্যুদণ্ডের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদেনের জন্য নথি) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।

 

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেএমবির পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন, একই এলাকার ইছাহাক আলী, বগুড়ার গাবতলী এলাকার লিটন মিয়া ওরফে রফিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের রাজারহাটের মকর রাজমাল্লী এলাকার আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব এবং গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন। এরমধ্যে হাইকোর্টের রায়ের ইছাহাক আলী খালাস পান। বাকি চার আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরমধ্যে আসামি বিপ্লব পলাতক আছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে।

 

হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারিক আদালতে খালাস পেয়েছিলেন আরেক আসামি পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ (২৮)।

এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দুজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরী এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান (২৮) ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের আগে ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি (২১) অভিযোগ গঠনের পরে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

 

জেএমবির ওই আট জঙ্গির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী। পরে মামলাটি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে স্থানান্তরিত হলে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলায় বাদীপক্ষের ৫৫ সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করতেন। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর ওই কাচু আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com